বাংলাদেশ ছাড়া কলকাতা বইমেলা: হতাশা ও অনিশ্চয়তা

প্রথমবারের মতো কলকাতা বইমেলায় থাকছে না বাংলাদেশ: হতাশা আয়োজকদের মধ্যে

Shahos Datta
3 Min Read
৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন © সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত কলকাতা বইমেলা এ বছর তার ৪৮তম আয়োজন করতে চলেছে। তবে দীর্ঘ ৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে হতাশা বিরাজ করছে মেলা কর্তৃপক্ষ, আয়োজক, এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাঠকদের মধ্যে।

কলকাতা বইমেলা, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে, প্রতিবছরই বাংলাদেশের সাহিত্য, প্রকাশনা ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল। মেলার প্রতিটি আয়োজনে বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, লেখক ও সাহিত্যিকদের উপস্থিতি শুধু আয়োজকদের নয়, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাঠকদের মধ্যেও আলাদা আকর্ষণ তৈরি করত। গত বছর মেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছিল ইউনেস্কোর স্বীকৃত ঢাকার রিকশা এবং রিকশা চিত্রের থিমে। সেই বছর প্রায় ২৭ লাখ পাঠক মেলায় অংশ নিয়েছিলেন, আর বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২৩ কোটি রুপির বই। তবে এ বছর, দুই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ মেলায় অংশগ্রহণ করছে না।

বাংলাদেশের অনুপস্থিতি: হতাশা এবং অনিশ্চয়তা

কলকাতা বইমেলার উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পষ্ট হতাশা দেখা যাচ্ছে। গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “বাংলাদেশ মেলায় অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে আমরা এখনো কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। বিষয়টি পুরোপুরি দুই দেশের সরকারি অনুমতির ওপর নির্ভরশীল।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”

গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশু দে বলেন, “বাংলাদেশ মেলায় অংশ না নিলে আমরা শুধু আয়োজক হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরাও হতাশ হবেন। বাংলাদেশের লেখক এবং প্রকাশনার প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের আলাদা টান রয়েছে। বাংলাদেশের অভাব আমাদের জন্য কষ্টদায়ক, কারণ মেলার প্রতিটি আয়োজনের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম জড়িত।”

উদ্যোক্তাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে মেলার আয়োজকরা ভিসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত। তবুও, এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

থিম কান্ট্রি এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দেশ

এবারের মেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি। মেলার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত জার্মান ভাইস কনসাল সিমন ক্লাইমপাস এবং গ্যোয়েট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যাস্ট্রিড ভেগে। জার্মানির পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ মেলায় অংশ নিচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও প্রকাশনা সংস্থাগুলি মেলায় অংশ নেবে। এবারের বইমেলায় ১,০৫০টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা এবং ২০০টির বেশি লিটল ম্যাগাজিন অংশ নেবে।

মেলা শুরু হবে ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪, এবং চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত। বরাবরের মতো মেলার শুভ উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাঠকদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের কবি ও সাহিত্যিকদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাঠকদের যে গভীর আকর্ষণ রয়েছে, তা এবার মেলায় স্পষ্টতই অনুভূত হবে না। বাংলাদেশের অনুপস্থিতি কলকাতা বইমেলার প্রাণশক্তিকে অনেকটাই হ্রাস করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেষমেশ, আয়োজকরা এখনও আশাবাদী যে, বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে মেলার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছাড়া মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের জন্য যেমন হতাশার, তেমনি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের জন্যও।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *