আজকে বাংলার “লেডি হিটলার” শেখ হাসিনার জন্মদিন

Shahos Datta
3 Min Read

ছাত্র–জনতার দেশ কাঁপানো আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার পতন হয় ৫ আগস্ট, পালিয়ে আসে ভারতে। শেখ হাসিনা সরাসরি গুলির নির্দেশ দেয়। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ অস্ত্র হাতে নেমে পরেছিল৷ পুলিশ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ এর সম্মিলিত আক্রমনে এখন পর্যন্ত ১৪২৩ জনের মৃত্যু হয়, ১৯২০০ জন আহত হয়। এত মানুষকে হত্যার জন্য পুরো বিশ্ব থেকে নিন্দার ঝড় উঠে। সবাই তাকে “লেডি হিটলার” নামে অবিহত করতে থাকে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু এরপর থেকে তিনি আর কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হতে দেননি।

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, দেশকে স্বজনপ্রীতিমূলক পুঁজিবাদের কবলে ফেলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়া, আয়বৈষম্য চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, এবং অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা। তবে তিনি নিজেকে সবসময় অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি দিয়ে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু শাসনের শেষ পর্যায়ে দেশের অর্থনীতিকেও সংকটের মুখে ফেলেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পায়, এবং দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।

শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা যখন এই সংকট নিয়ে জনগণের প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তখন তারা উপহাস করতেন। কেউ কেউ বলতেন, দেশ নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আগে থেকেই একটি ব্যাপক ক্ষোভ ছিল, যা সময়ের অপেক্ষায় ছিল বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য। সেই ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এর আগেও ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র আন্দোলন এবং ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এই ধরনের ক্ষোভের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘রাজাকার’ সম্পর্কিত বক্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের দাবিকে এড়িয়ে গিয়ে তাঁদের আদালতের চক্করে ফেলার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে স্লোগান দিতে শুরু করেন, “তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।”

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে এমন প্রতিবাদ কেউ করার সাহস করেনি। গুম, গ্রেপ্তার, হয়রানি ও দমনমূলক আইন ব্যবহার করে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়িয়ে যান। সেখান থেকে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন অধ্যায়।

আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেন। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেয়। এই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের ঘটনা ঘটে।

২৩ দিনের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটায় এবং জনগণ ‘অপশাসন’ থেকে মুক্তি লাভ করে।

Share This Article
1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *