মেঘালয়, ভারতের উত্তর-পূর্বের একটি রাজ্য, তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত হলেও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজ্যের মাথাপিছু আয় দেশের অন্যতম কম। প্রধানমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদানকারী কাউন্সিলের (EAC-PM) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই সংকটটি তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে মেঘালয়ের মাথাপিছু আয়ের গতিশীলতা এবং তার তুলনামূলক অর্থনৈতিক অবস্থান বর্ণিত হয়েছে, যা বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গড়ের মাত্র ৭৪.৩%।
মেঘালয়ের মাথাপিছু আয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মেঘালয়ের মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের ৭৪.৪% ছিল, যা ২০০০-০১ সালে বেড়ে ৮৮.৪% হয়। তবে এরপরে এটি ক্রমাগত কমতে থাকে এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮১%, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭১.৩% এ নেমে আসে। বর্তমান সময়ে, এটি ৭৪.৩% রয়েছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিম্নগতি নির্দেশ করে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা
মেঘালয়ের মাথাপিছু আয় যখন কমছে, তখন অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো দ্রুত উন্নতি করছে। উদাহরণস্বরূপ, সিকিমের মাথাপিছু আয় ২০০০-০১ সালে জাতীয় গড়ের ১০০% থেকে ২০২৩-২৪ সালে ৩১৯% এ উন্নীত হয়েছে। মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের মাথাপিছু আয়ও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মেঘালয়ের তুলনায় তাদের উন্নয়নের লক্ষণ।
মেঘালয়ের অর্থনৈতিক সংগ্রামের কারণ
মেঘালয়ের অর্থনৈতিক পিছিয়ে পড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, রাজ্যের অর্থনীতি প্রাথমিকভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল, যেখানে উৎপাদনশীলতা কম। রাজ্যে শিল্পায়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের অভাবও বড় সমস্যা। উচ্চ বেকারত্ব হার বিশেষত যুবকদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান কারণ, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।
সরকারের উদ্যোগ ও নীতি ব্যর্থতা
মেঘালয় সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পর্যটন ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে দুর্বল অবকাঠামো ও সীমিত সংযোগের কারণে এই উদ্যোগগুলো তেমন সফল হয়নি। এছাড়াও, শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়লেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকীর্ণ রয়ে গেছে, যা মস্তিষ্কের নিঃসরণের (ব্রেইন ড্রেইন) প্রবণতা বাড়িয়েছে।
সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
মেঘালয়ের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিশেষত পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, শিল্পখাত ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, কৃষি সংস্কার ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
উপসংহার
মেঘালয়ের অর্থনৈতিক যাত্রা জাতীয় ও আঞ্চলিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর অগ্রগতি সত্ত্বেও, মেঘালয় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব।