কলকাতায় বাংলাদেশি নাগরিকদের পকেট মারার ঘটনা কমে যাওয়ায় স্থানীয় পকেটমারদের পেশা বদল করার খবর সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। কলকাতা শহর, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এবং যেখানে বহু বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন কারণে যাতায়াত করেন, সেখানে পকেটমারদের কার্যকলাপ আগে উল্লেখযোগ্য ছিল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু কারণের কারণে এই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।
পকেটমারদের পেশা বদলের কারণ:
- টেকনোলজির উন্নতি: নগদ অর্থ বহনের প্রবণতা এখন অনেকটাই কমে গেছে, কারণ মানুষ ক্রমশই ডিজিটাল পেমেন্ট এবং ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে। অনলাইন লেনদেন বাড়ার ফলে পকেটে নগদ অর্থ রাখার প্রয়োজন অনেকটাই কমে গেছে। পকেটমারদের জন্য নগদ অর্থ চুরি করার সুযোগ আগের মতো নেই।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সচেতনতা: কলকাতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার উপস্থিতি, পুলিশি টহল, এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার কারণে পকেটমারদের কার্যকলাপ আগের মতো সহজ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশি নাগরিকরা যারা ব্যবসায়িক বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যান, তারা এখন অনেক বেশি সতর্ক।
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কড়াকড়ি: কলকাতার স্থানীয় প্রশাসন পকেটমারদের দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশি অভিযান এবং স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালানোর ফলে পকেটমারদের জন্য শহরে কাজ করা আগের মতো সহজ নয়। ফলে অনেক পকেটমার বাধ্য হয়ে তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
- বাংলাদেশিদের সচেতনতা: কলকাতায় ভ্রমণ করা বাংলাদেশি নাগরিকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক এবং সচেতন। তারা তাদের মূল্যবান সামগ্রী, যেমন টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, বেশি সাবধানে রাখেন। এছাড়া, মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করে অনেকেই তাদের অর্থ বা কার্ড সুরক্ষিত রাখছেন।
পেশা বদল ও নতুন উদ্যোগ:
এই পরিস্থিতিতে, যারা আগে পকেটমারি করতেন, তারা অন্য ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা ছোটখাটো ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছেন। অনেক পকেটমার কলকাতায় হকারি বা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছেন, কারণ শহরের ব্যস্ত এলাকায় তারা নতুন উপায়ে অর্থ রোজগারের চেষ্টা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে, তারা বিভিন্ন বৈধ ব্যবসা, যেমন ফুটপাতে দোকান খোলা বা রিকশা চালানোর মতো কাজ বেছে নিচ্ছেন।
কলকাতায় পকেটমারদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হল প্রযুক্তির উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং আইনশৃঙ্খলার কড়াকড়ি। পকেটমাররা এখন জীবিকার জন্য অন্যান্য পেশায় ঝুঁকছেন, যা শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নির্দেশ করে।