পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। একসময় একই ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে থাকা এ দুটি অঞ্চলের মধ্যকার পার্থক্য আধুনিককালে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, বিশেষ করে গত কয়েক দশকে, দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি করেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে থেকে, বাংলাদেশের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলে মনে করা হয়।
এই প্রবন্ধে আমরা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করব কেন পশ্চিমবঙ্গ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। আমরা এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, সামাজিক অবকাঠামো, বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, জনসংখ্যা ও জনশক্তি, এবং বহিঃমুখী সম্পর্কসহ আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।
১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শাসনব্যবস্থা
১.১ বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে যে উন্নতি করেছে, তার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছে। সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যেমন “ভিশন ২০২১” এবং “ভিশন ২০৪১” এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
এই পরিকল্পনাগুলির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের সরকার শক্তিশালী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয় স্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফলতা অর্জন করেছে।
১.২ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের প্রবণতা রাজ্যের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের শাসনের পর তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান, এবং সাম্প্রতিককালে বিজেপির শক্তিশালী হওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা এবং দলীয় সংঘাতের প্রভাব উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে পরিলক্ষিত হয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজ্যের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, বিনিয়োগ, এবং শিল্পায়নকে ব্যাহত করেছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শুরুতে বিলম্ব এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পর্কের অমিল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়ন
২.১ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত তার গার্মেন্টস শিল্পের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। গার্মেন্টস খাতের রপ্তানি দেশটির জিডিপির একটি বড় অংশ দখল করে আছে। এছাড়াও কৃষি খাত, বিশেষ করে ধান ও পাট উৎপাদন, দেশীয় অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্র ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন গ্রহণ করেছে, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী এক বৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলিতে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশাল অবদান রাখে এবং দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
২.২ পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও অর্থনীতি
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি, এবং রাজ্যের শিল্পখাতের অবস্থা কিছুটা সঙ্কটপূর্ণ। ভারতের অন্যান্য শিল্পোন্নত রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের গতি ধীর। যদিও পশ্চিমবঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ঘটছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে ধীর।
ভারতীয় অর্থনীতির অংশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতবিরোধ উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে রাজনৈতিক জটিলতা এবং প্রশাসনিক জটিলতা অনেকসময় প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে।
৩. বিদেশি বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
৩.১ বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ
বাংলাদেশের সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কিছু কার্যকর নীতি গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলির সাথে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) গড়ে তোলা হয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুবিধাজনক অবকাঠামো এবং সহজলভ্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া প্রদান করে।
চীন ও জাপানের মত দেশগুলি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে, বিশেষত রাস্তা, বন্দর এবং বিদ্যুৎ খাতে। বাংলাদেশ তার শ্রমশক্তির সস্তা মজুরির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগস্থল হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
৩.২ পশ্চিমবঙ্গের বিদেশি বিনিয়োগের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তুলনামূলকভাবে ধীরগতি দেখা যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যটি। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কিছু উন্নতি হয়েছে এবং কলকাতা ও সল্টলেক সিটির আইটি সেক্টর বিশ্বমানের পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক ধীর গতিতে প্রসারিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক জটিলতা পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় রাজ্যের নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে সমস্যায় পড়েন, যার ফলে তারা অন্যত্র বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন। ভারতের অন্যান্য রাজ্য, যেমন মহারাষ্ট্র বা কর্ণাটক, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক বেশি সফল হয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ-বান্ধব নীতি প্রণয়ন জরুরি।
৪. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ডিজিটালাইজেশন
৪.১ বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাফল্য তার প্রযুক্তি খাতের দ্রুত অগ্রগতি। ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স সেক্টরের ব্যাপক প্রসার। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষ সহজে ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে প্রসারিত করেছে। বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব এনেছে।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আইটি আউটসোর্সিং ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ফ্রিল্যান্স কাজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়তা করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আইটি সেক্টর থেকে রপ্তানির পরিমাণ $৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
৪.২ পশ্চিমবঙ্গে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
পশ্চিমবঙ্গেও প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটছে, কিন্তু তা বাংলাদেশের তুলনায় ধীর। কলকাতা এবং তার আশেপাশের এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করছে। বিশেষত সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ এবং নিউটাউনে আইটি পার্ক ও হাব গড়ে উঠেছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গ এখনও আইটি আউটসোর্সিংয়ের বিশ্বমানের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবকাঠামোগত সমস্যা প্রযুক্তি খাতে প্রবৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
৫. সামাজিক অবকাঠামো: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত
৫.১ বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত
বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। “প্রাথমিক শিক্ষা সবের জন্য” এবং “স্বাস্থ্য সবার জন্য” কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটিয়েছে। নারী শিক্ষা ও গ্রামীণ শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা দেশের কর্মক্ষমতা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য খাতেও বাংলাদেশ সফলভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার কমানো, এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকার টিকা কার্যক্রম এবং পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে।
৫.২ পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে উচ্চ, তবে শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও মানের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে। শহরাঞ্চলে শিক্ষার মান ভালো হলেও, গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার মান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া উচ্চশিক্ষায় কর্মসংস্থানের সংকটও উল্লেখযোগ্য।
স্বাস্থ্য খাতে পশ্চিমবঙ্গে এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রয়োজন। গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাব, হাসপাতালের অপ্রতুলতা, এবং চিকিৎসার মানের পার্থক্য রাজ্যের জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। যদিও কলকাতা শহরে উন্নত হাসপাতাল রয়েছে, তবে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এখনও প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নত সেবা দিতে পারায় পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় এগিয়ে আছে।
৬. জনমিতি ও জনশক্তির ব্যবহার
৬.১ বাংলাদেশের জনমিতি
বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ৩০ বছরের নিচে, যা দেশকে একটি বিশাল কর্মক্ষম শক্তির উৎস হিসেবে তৈরি করেছে। যুব সমাজের এই শক্তিকে দক্ষ করে তোলার জন্য সরকার নানাবিধ প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে শ্রম মজুরির তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ার কারণে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে শ্রমশক্তি সরবরাহকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দক্ষ শ্রমশক্তির বিকাশ, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও আইটি খাতে, বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে।
৬.২ পশ্চিমবঙ্গের জনমিতি
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার বয়সের গড় তুলনামূলকভাবে বেশি, এবং এটি কর্মশক্তির ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ। কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ কম এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতে চাপ বাড়ছে। রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত, যার ফলে অনেক দক্ষ তরুণ চাকরির জন্য অন্য রাজ্যে বা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
৭. বহিঃমুখী সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক সাফল্য
৭.১ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। চীন, ভারত, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশের সাথে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ একদিকে যেমন চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (BRI) অংশ নিচ্ছে, তেমনই ভারতের সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাথে তার মজবুত সম্পর্ক, যা তৈরি পোশাক শিল্পের প্রসার এবং উন্নয়নে সহায়তা করেছে। এছাড়াও, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট (আসিয়ান)-এর সাথে সম্পর্ক বাড়িয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছে।
৭.২ পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজ্য হিসেবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়, ফলে এর নিজস্বভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা নেই। তবে, ভারতের অংশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পায়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, বিশেষত সীমান্ত নিরাপত্তা, নদী পানি বণ্টন এবং পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে। তবুও, পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বা কূটনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
উপসংহার
উপসংহারে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে, যা একে অপরের তুলনায় এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকার মূল কারণ। বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, এবং বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্পায়নের ধীরগতি, এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের অভাব রাজ্যের অগ্রগতিকে বাঁধাগ্রস্ত করছে।
তবে, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের সুযোগ এখনও আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তি খাতে অধিক বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের মতো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।