ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনিপুরের সংঘাতমূলক পরিস্থিতি শুধু রাজ্যটির অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে প্রাধান্য দিচ্ছে না, বরং বিজেপি সরকারকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলেছে।
মনিপুরের সমস্যা: একটি দীর্ঘমেয়াদী সংকট
মনিপুর রাজ্যটি দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার শিকার। এখানে মেইতেই, নাগা, কুকি এবং অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ ও সংঘাত রয়েছে। এই সমস্যা বহু বছর ধরে চলে আসছে, এবং এর মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা রয়েছে যারা স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে।
সাম্প্রতিক অস্থিরতা
২০২৩ সালে মনিপুরে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং বিক্ষোভ উল্লেখযোগ্য। এই উত্তেজনা মেইতেই ও কুকি গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ ও ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে শুরু হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, সরকারি বাহিনীর দ্বারা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে।
বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ
মনিপুরের এই অস্থিরতা বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে এর সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ।
- নিরাপত্তা পরিস্থিতি: বিজেপি সরকারের অধীনে মনিপুরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। বিক্ষোভকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
- বিরোধী দলগুলোর চাপ: বিরোধী দলগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে মনিপুরের সংকটকে সমাধানে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে। তারা বলছে, বিজেপি সরকার মনিপুরের সমস্যাগুলি দীর্ঘমেয়াদীভাবে সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা রাজ্যের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিজেপি মনিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে সেগুলি কতটা কার্যকর হবে তা এখনও অনিশ্চিত। রাজ্যটির স্থায়ী সমাধানের জন্য কেবলমাত্র সামরিক ব্যবস্থা নয়, বরং রাজনৈতিক সংলাপ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতিগত সম্প্রীতি বজায় রাখতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
মনিপুরের সমস্যাগুলির দ্রুত ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না করলে, তা কেবল রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেই নয়, বরং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিজেপির অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে।