বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বাহিনী, যা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দেশটির সেনাবাহিনী আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত সামরিক সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞ বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক কার্যক্রমে নিজেদের শক্তিশালী করেছে।
এই প্রবন্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সামরিক সরঞ্জামগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে, যাতে থাকবে ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনী, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন প্রযুক্তি, এবং বিশেষ বাহিনীর কার্যক্রম।
১. ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের আধুনিক ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে যা তাদের শক্তি ও গতি বৃদ্ধি করে। এই সাঁজোয়া বাহিনী দেশের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
MBT-2000 ট্যাংক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক (Main Battle Tank) হলো MBT-2000, যা চীনের সহায়তায় তৈরি। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী ট্যাংক, যা বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়।
- MBT-2000 ট্যাংকটি ১২৫ মিমি মেইন গান দ্বারা সজ্জিত।
- ট্যাংকটির সর্বোচ্চ গতি ৭৫ কিমি/ঘণ্টা এবং এটি ৪০০ কিমি পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
- এতে উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম ও সাঁজোয়া সুরক্ষা রয়েছে, যা ট্যাংকটিকে শক্তিশালী করে।
Type 69-II G ট্যাংক
Type 69-II G ট্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো এবং এখনও সক্রিয় ট্যাংক। এটি চীনা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি প্রায় ১০০০ মিমি সাঁজোয়া সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম।
- এর ফায়ারিং রেঞ্জ ২০০০ মিটার পর্যন্ত এবং এটি ১০৫ মিমি গানের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
Type 90-IIM
Type 90-IIM চীনের তৈরি একটি উন্নত ট্যাংক যা দ্রুতগামী এবং অত্যন্ত শক্তিশালী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এটি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন আক্রমণাত্মক অপারেশনে।
- এটি উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম এবং নাইট ভিশন ক্যাপাবিলিটি দ্বারা সজ্জিত।
- ট্যাংকটির ১০৫ মিমি মেইন গান রয়েছে, যা ৩২০০ মিটার পর্যন্ত গোলাবর্ষণ করতে পারে।
২. গোলন্দাজ বাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনী দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অংশ। আধুনিক গোলন্দাজ সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত হওয়ার ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা অপারেশনে সক্ষম।
NORINCO SH-1 স্বয়ংক্রিয় হাউইটজার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীতে NORINCO SH-1 হাউইটজার ব্যবহৃত হয়। এটি ১৫৫ মিমি ক্যালিবারের এবং স্বয়ংক্রিয় গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম।
- এর সর্বোচ্চ ফায়ারিং রেঞ্জ ৫০ কিমি পর্যন্ত।
- এটি সহজে মোতায়েনযোগ্য এবং যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য উপযোগী।
Type 59 হাউইটজার
Type 59 হাউইটজার হলো বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো কিন্তু এখনও সক্রিয় হাউইটজার। এটি মূলত দীর্ঘ-পাল্লার গোলাবর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি অত্যন্ত কার্যকর।
- এর ফায়ারিং রেঞ্জ প্রায় ২৭ কিমি পর্যন্ত হতে পারে।
- এটি ১৩০ মিমি ক্যালিবারের গোলা ব্যবহার করে এবং স্থির লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
BTR-80 বর্মিত গাড়ি
BTR-80 হলো একটি সাঁজোয়া যান যা গোলন্দাজ বাহিনীর দ্রুত মোতায়েনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি চীনের তৈরি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- এটি ১৪.৫ মিমি মেশিনগান দ্বারা সজ্জিত এবং সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিমি/ঘণ্টা।
৩. বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের আকাশ সীমান্ত সুরক্ষিত রাখে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকরী।
FM-90 বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইল সিস্টেম
চীনা তৈরি FM-90 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। এটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যা শত্রুদের বিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোন প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
- এর ফায়ারিং রেঞ্জ ১৫ কিমি পর্যন্ত।
- এটি উচ্চ গতির টার্গেট মোকাবিলা করতে সক্ষম।
KS-1M ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম
KS-1M হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি মাঝারি-পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইল সিস্টেম, যা আকাশপথের বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর। এটি উচ্চ গতির লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং রাডার সহায়তায় পরিচালিত হয়।
- এর ফায়ারিং রেঞ্জ ৫০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে।
- এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রুদের সনাক্ত করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
Anza Mk-II ক্ষেপণাস্ত্র
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর Anza Mk-II মিসাইল সিস্টেমটি ক্ষুদ্র-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ম্যানপোর্টেবল (কাঁধে বহনযোগ্য) এবং শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার ধ্বংস করতে কার্যকর।
- এর ফায়ারিং রেঞ্জ ৫ কিমি পর্যন্ত।
- এটি ইনফ্রারেড-গাইডেড সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়।
৪. ড্রোন ও বিমান প্রযুক্তি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ড্রোন প্রযুক্তি এবং অন্যান্য বিমান প্রযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি, এবং সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে। ড্রোনগুলির উন্নত ব্যবহারের ফলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আরো কৌশলগত সুবিধা পায়।
CH-4B ড্রোন
CH-4B ড্রোন হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি উন্নত আক্রমণাত্মক এবং গোয়েন্দা ড্রোন, যা চীনের তৈরি। এটি দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকতে পারে এবং শত্রুদের অবস্থান চিহ্নিত করতে এবং আক্রমণ করতে সক্ষম।
- এর ফ্লাইট রেঞ্জ প্রায় ৩০০০ কিমি।
- এটি ৩০ ঘণ্টা ধরে আকাশে নজরদারি করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
Bayraktar TB2 ড্রোন
তুরস্কের তৈরি Bayraktar TB2 হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ড্রোন, যা আক্রমণ এবং নজরদারি কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রুদের সনাক্ত করতে পারে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
- এর সর্বোচ্চ ফ্লাইট রেঞ্জ ৩০০ কিমি।
- এটি ৫৫ কেজি পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
৫. বিশেষ বাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী (Special Forces) হলো একটি উন্নত এবং প্রশিক্ষিত বাহিনী, যা বিভিন্ন উচ্চ ঝুঁকির সামরিক অপারেশন পরিচালনা করে। তাদের কাজের মধ্যে থাকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অপারেশন, কমান্ডো অপারেশন, এবং শত্রুদের পিছনে থেকে হামলা পরিচালনা করা।
প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেড
প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেড হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকস এবং প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনী। তারা বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত অপারেশন পরিচালনায় দক্ষ, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অপারেশন এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সামরিক অপ