ভারত বর্তমানে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে ২৫% যুবক—১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ—NEET (শিক্ষায় নেই, কর্মসংস্থানে নেই, প্রশিক্ষণে নেই) শ্রেণীতে পড়ে। এই সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
জনসংখ্যার প্রবণতা ও চ্যালেঞ্জ
ভারতের যুব জনসংখ্যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু জন্মের হার কমে যাওয়ার কারণে কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাতও স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। এভাবে যুবকদের একটি বড় অংশ শিক্ষার, কর্মসংস্থানের, বা দক্ষতা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিরাট সুযোগ হারানোর সম্ভাবনা তৈরি করছে।
NEET সমস্যার মূল কারণ
- শিক্ষা এবং চাকরির বাজারের মধ্যে অমিল: ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক কর্মশক্তির চাহিদা পূরণে অপর্যাপ্ত। এখানে পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং বাস্তবিক দক্ষতার অভাব রয়েছে, ফলে যুবকরা উচ্চতর ডিগ্রির অধিকারী হলেও সঠিক চাকরি পেতে পারছে না।
- লিঙ্গ বৈষম্য: নারীদের কাজের ক্ষেত্রে প্রবল বাধা রয়েছে, যার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী প্রত্যাশা, কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহায়তার অভাব, এবং নারীদের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগের অভাব অন্তর্ভুক্ত।
- আঞ্চলিক অসমতা: শহর এবং গ্রামে বড় বৈষম্য রয়েছে। গ্রামীণ যুবকদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, ফলে NEET যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে।
- অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং চাকরির সৃষ্টি: কিছু খাতে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, চাকরি সৃষ্টির হার যুবকদের প্রবাহের সাথে তাল মেলাতে পারছে না। COVID-19 মহামারীর কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
- মানসিক স্বাস্থ্য এবং উদ্বেগ: NEET যুবকদের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই সমাজের মূলধারার সঙ্গে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না।
সরকারের ভূমিকা এবং নীতিগত উদ্যোগ
ভারত সরকার যুব কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেমন Skill India Mission এবং Make in India। এই উদ্যোগগুলির উদ্দেশ্য হল পেশাদার প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন বাড়ানো এবং নতুন ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় ও মহিলাদের মধ্যে এই উদ্যোগগুলোর কার্যকরীতা ও না পৌঁছানোর জন্য প্রচুর সমালোচনা রয়েছে।
নতুন সরকারের অগ্রাধিকার
নতুন সরকারকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে:
- মহিলাদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো: কর্মজীবী নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশু যত্ন সহায়তা, এবং নমনীয় কাজের পরিবেশ তৈরি করা।
- পেশাদার প্রশিক্ষণের উন্নতি: শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা, যাতে যুবকদের বাজার-সম্পর্কিত দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করা যায়।
- আঞ্চলিক ফোকাস: অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থান সুযোগের ঘাটতি রয়েছে এমন এলাকায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া।
- উদ্যোক্তা সমর্থন: যুবকদের মধ্যে উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে উৎসাহিত করা।
- মানসিক স্বাস্থ্য এবং ক্যারিয়ার পরামর্শ: যুবকদের মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থন, ক্যারিয়ার পরামর্শ, এবং মেন্টরশিপের সুযোগ দেওয়া।
ভারতের NEET সংকট দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সরকার, বেসরকারি খাত, এবং নাগরিক সমাজকে একত্রিত হয়ে সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। এখনই সময় নেওয়ার, যাতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই, এবং ভবিষ্যতমুখী নীতির দিকে মনোনিবেশ করা যায়।